খারাপ পরিস্থিতি এসে পড়লে আমরা অনেক সময়  হুট করে রেগে যাই, কোনো ঘটনার কথা শুনে অল্পতেই প্রতিক্রিয়া দেখাই আমরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া জানাই  আবার কখনো অন্যের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়ি। যেকোনো পরিস্থিতিতে সব সময় প্রথমে আমাদের ধীর স্থির মনোভাব প্রদর্শন করা উচিত। হুট করে রেগে গিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া কখনোই ইতিবাচক আচরণ নয়। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো স্কুল অব প্রফেশনাল সাইকোলজির পিএইচডি গবেষক ও মনোবিদ জেসমিন আক্তার বলেন, ‘প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন আমাদের স্বাভাবিক আচরণগুলোর একটি। ব্যক্তিত্ব ও মন কতটা প্রাণবন্ত তার ওপর নির্ভর করে আমরা কীভাবে কোন পরিস্থিতিতে কী আচরণ করব। স্থিরভাবে প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন সব সময় বুদ্ধিমানের কাজ।

সঠিক কারন খুজে বের করুন

কোন ঘটনা ঘটলে সেটা একার জন্য ঘটে না, সঠিক কারন খুজে বের করুন, আপনার নিজের কতটা ইনভলমেন্ট ছিল সেটা খুজে বের করুন, বা অপর পক্ষ জেদের বসে করেছে বা নিরুপায় ছিল কিনা সেটাও ভাবার বিষয় ।

ধীর গতিতে এগোন সময় নিন। 

ধৈর্য ধরুন যদি সম্ভব হয় নইলে হিতে বিপরীত হয়, কোনো ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া এড়িয়ে চলুন। ধৈর্য ধরে যতটা সম্ভব সঠিক তথ্য ও ঘটনার কারণ জানার চেষ্টা করুন। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত ও পেছনের কারণ নিয়ে নিজেকে বারবার প্রশ্ন করুন। প্রশ্ন করুন—প্রতিক্রিয়া বা মতামতের, ভবিষ্যতে প্রভাব থাকবে কতটুকু। আপনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার হয়তো আগামীকালই কোনো মূল্য থাকবে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্রতিক্রিয়া না দেখালে ভবিষ্যতে তেমন ক্ষতি হয় না। প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগে ভাবুন, স্থির থাকুন।

ইতিবাচক / পজেটিভ থাকুন

যেকোনো ঘটনার সময়ই আমরা চাপ অনুভব করি। চাপের কারণে দুশ্চিন্তায় পড়ি, বিক্ষিপ্ত হয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি। এমন পরিস্থিতিতে যতই আমরা ঘটনা নিয়ে ভাবব, কারণ অনুসন্ধানে মনকে ব্যস্ত রাখব, ততই আমাদের শান্ত থাকার সম্ভাবনা কমে যায়। পরিস্থিতি নিয়ে ‘এটা হলে কেমন হতো’, ‘ওটা না হলে কেমন হতো’-এমন দ্বিধায় জড়াবেন না। সব সময়ই নেতিবাচক কথা মন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন। যেকোনো পরিস্থিতিতে ইতিবাচকভাবে মনকে স্থির রাখুন।

‘যদি’ এড়িয়ে চলুন

‘ইশ্‌, যদি ব্যাপারটা এমন হতো’—এমন আক্ষেপে আমরা হতবিহ্বল হয়ে পড়ি। যেকোনো ঘটনা বা পরিস্থিতিতে যদি-সংক্রান্ত সব প্রশ্ন এড়িয়ে চলুন। যা হয়নি, যা হবে না তা নিয়ে ভেবে ভেবে মনকে বিক্ষিপ্ত করে নিজেকে অশান্ত করবেন না। এমন প্রশ্নে আসলে নিজের ভয় আর সংশয় প্রকাশ পায়।

শরীরের যত্ন নিন

যেকোনো পরিস্থিতিতে শান্ত থাকা এক দিনের অভ্যাসে তৈরি হবে না। শরীরের যত্ন নিতে হবে নিয়মিত। টুকটাক ও হালকা ব্যায়াম করুন প্রতিদিন। পরিমাণমতো ঘুমাতে হবে। যোগব্যায়াম করে মনে প্রশান্তি আনুন।

ক্যাফেইন বা এ্যলকোহলকে ‘না’ বলুন

উত্তেজনাকর যেকোনো মুহূর্তে পারতপক্ষে চা-কফির মাত্রা কমিয়ে দিন। চা-কফির ক্যাফেইন আমাদের উদ্দীপ্ত করে, অ্যাড্রেনালিন হরমোনের প্রবাহ বাড়িয়ে উত্তেজিত করে দেয়। এ্যলকোহলকে একেবারে না বলতে হবে,  উত্তেজনাকর যেকোনো মুহূর্তে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে পারেন , হাত মুখে ঠাণ্ডা পানি ছিটা দিতে পারেন।

বন্ধুর সঙ্গে কথা বলুন

যেকোনো উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে নিজের মতামত প্রকাশের আগে বন্ধু বা বিশেষজ্ঞ কারও পরামর্শ নিতে পারেন। আপনি হয়তো যেভাবে ভাবছেন, আপনার বন্ধুর ভাবনা অন্যরকম হতে পারে। অন্যের ভাবনা জানলে আপনার প্রতিক্রিয়ায় পরিবর্তন আসতে পারে। আবার বিশেষজ্ঞ কারও পরামর্শ নিলে পরিস্থিতির কারণগুলো আপনি বেশ পরিষ্কার জানতে পারেন।

নিজেকে মুক্ত করুন

খুব চাঞ্চল্যকর কোনো ঘটনায়   আমরা প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে বাহবা নিতে চেষ্টা করি। এমনটা কখনোই করবেন না। চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সময় কয়েক ঘণ্টার জন্য নিজেকে সরিয়ে নিন অন্য কোনো কাজে। পার্কে ঘুরে আসতে পারেন কিংবা নিজের    কোনো প্রিয় বইয়ের পাতায় নিজেকে সরিয়ে নিন।

রাগ-প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে আনতে শিখুন

অন্যের ওপর রাগ প্রদর্শন আমাদের অনেকেরই বাজে অভ্যাস। রাগ নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে হবে। রাগ সহজাত একটি আবেগ, যা নিয়ন্ত্রণ করতে কৌশলী হতে হবে। অন্যের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে অন্যদের মতামত জানতে হবে। অন্যের কথাকে সম্মান জানিয়ে সামগ্রিক পরিস্থিতি বুঝতে হবে।